রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২৭ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

পুণ্যভূমি ফিলিস্তিন

আবদুল আউওয়াল:
পুণ্যভূমি ফিলিস্তিন। যে ভূমিতে বসবাস করেছেন অনেক নবী-রাসুল। জন্মেছেন অনেক পুণ্যাত্মা। যে মাটির বুকে শুয়ে আছেন হজরত ইবরাহিম (আ.), হজরত ইসহাক (আ.), হজরত ইয়াকুব (আ.), হজরত ইউসুফ (আ.), হজরত মুসা (আ.), হজরত দাউদ (আ.) ও হজরত সোলায়মান (আ.)-সহ অনেক পুণ্যবান পুরুষ। যে ভূমিতে কদম পড়েছে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামসহ সব নবী-রাসুলের। যেখানে আছে বহু প্রাচীন এলাহি নিদর্শন ও ইসলামি স্থাপনা। তাই ইসলামে এ ভূমির রয়েছে যথেষ্ট মর্যাদা। মুসলিমদের কাছে আছে অনেক কদর। যেসব কারণে ফিলিস্তিন অনন্য বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত এর কয়েকটি হলো

বায়তুল মোকাদ্দাস : বায়তুল মোকাদ্দাস বা মসজিদে আকসা মুসলিমদের প্রথম কিবলা। ওই দিকে ফিরে ইসলামের প্রথম জামানায় নবী কারিম (সা.) ও সাহাবিরা নামাজ আদায় করতেন। প্রায় ১০ বছর নামাজ আদায়ের পর মক্কা ও কাবার প্রতি নবীজির বিশেষ ভালোবাসা ও আশা-আকাক্সক্ষার ভিত্তিতে তা পরিবর্তন হয়। -সুরা বাকারা : ১৪০

বায়তুল মোকাদ্দাস পৃথিবীতে নির্মিত দ্বিতীয় মসজিদ। -বোখারি : ৩১১৫

মর্যাদার দিক থেকে মসজিদটি তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে। হজরত রাসুলে কারিম (সা.) বলেন, ‘তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও (ইবাদতের উদ্দেশ্যে) সফর করা যাবে না। মসজিদে হারাম, আমার এই মসজিদ (মসজিদে নববি) ও মসজিদে আকসা।’ -সহিহ মুসলিম : ৮২৭

এখানে নামাজ আদায়েও রয়েছে বিশেষ ফজিলত। হাদিস শরিফে এসেছে, নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘মসজিদে হারামের এক নামাজ এক লাখ নামাজের সমান, আমার মসজিদের (মসজিদে নববি) এক নামাজ এক হাজার নামাজের সমান ও বায়তুল মাকদিসের এক নামাজ পাঁচশ নামাজের সমান।’ -মাজমাউজ জাওয়াইদ : ৪/১১

আরেক হাদিসে এসেছে, ‘হজরত সোলায়মান (আ.) বায়তুল মোকাদ্দাস নির্মাণের সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন, যে ব্যক্তি নামাজের উদ্দেশে তাতে প্রবেশ করবে, সে যেন ওই দিনের মতো পবিত্র হয়ে যায় যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল। -সুনানে নাসায়ি : ৬৬৯

বরকতময় স্থান : ফিলিস্তিনের ভূমিতে আল্লাহতায়ালা বিশেষ বরকত রেখেছেন। সে বরকত দীনধর্মের বিষয়ে তো পরিষ্কার। কারণ অনেক নবী-রাসুল সেখানে বসবাস করেছেন। অনেকে সেখানে জন্মগ্রহণ করেছেন। আল্লাহর বাণী তাদের মাধ্যমে সে অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছেছে। অহি নাজিল হওয়ার চেয়ে বরকত আর কী হতে পারে! আর দুনিয়ার ভোগসামগ্রীর দিক বিবেচনা করলেও অনেক কিছুতে সে অঞ্চলের স্বাতন্ত্র্য রয়েছে। সেখানের জলপাই, ডুমুর, বাদাম ও বরইয়ের তো বিশেষ খ্যাতি আছে। এছাড়া আরও নানা কিছুতে অঞ্চলটি পৃথিবীর অন্যান্য স্থান থেকে আলাদা মর্যাদা রাখে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর মসজিদে আকসা যার আশপাশে আমি বরকত নাজিল করেছি।’ -সুরা বনি ইসরাইল : ১

ইসরা ও মিরাজের ভূমি : ইসরা ও মেরাজ নবী কারিম (সা.)-এর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। যে ঘটনার মধ্য দিয়ে তিনি সব নবীর সঙ্গে পরিচয় ও তাদের দ্বারা বিশেষ সম্মান প্রাপ্ত হন। তাদের নিয়ে ইমাম হয়ে নামাজ আদায় করেন এবং ঊর্ধ্বাকাশে ভ্রমণ (মেরাজ) করে জান্নাত-জাহান্নাম পরিদর্শনসহ আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দুনিয়ায় ফিরে আসেন। সে ঘটনাগুলো ফিলিস্তিন ভূখ-ের জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদে আকসাকে কেন্দ্র করে হয়েছিল। ইরশাদ হয়েছে, ‘পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তার বান্দাকে রাতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত।’ -সুরা বনি ইসরাইল : ১

সত্যদলের আবাসস্থল : ফিলিস্তিন এবং এর আশপাশ তথা সিরিয়া, জর্ডান প্রভৃতি অঞ্চলে সত্যের ওপর একশ্রেণির মুসলিম কেয়ামত পর্যন্ত অটল থাকবে। তাদের ব্যাপারে রাসুল (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমার উম্মতের একটি দল সত্যের ওপর বিজয়ী থাকবে। শত্রুদের আতঙ্ক থাকবে। দুর্ভিক্ষ ছাড়া কোনো বিরোধী দল তাদের কিছু করতে পারবে না (মানে তাদের দমন করতে পারবে না)। আল্লাহ হুকুমে কেয়ামত পর্যন্ত তারা এমনই থাকবে। সাহাবায়ে কেরাম তখন জিজ্ঞাসা করেন, ‘ওগো আল্লাহর রাসুল, তারা কোথায় থাকবে?’ রাসুল (সা.) বলেন, ‘তারা বায়তুল মাকদিস এবং এর আশপাশে থাকবে।’ -মুসনাদে আহমদ : ২১২৮৬

হাশরের ভূমি : বিশ্বজগৎ ধ্বংসের পর আবার প্রাণীরা জাগবে। তারা সবাই বিচারের মুখোমুখি হবে। বিচারের সেই প্রধান কেন্দ্রটি হবে ফিলিস্তিনের ভূমি। নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘বায়তুল মাকদিস হবে হাশরের ময়দান ও পুনরুত্থানস্থল। তোমরা তাতে গিয়ে নামাজ আদায় করো। কেননা এতে এক ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে অন্যান্য মসজিদে এক হাজার নামাজ আদায়ের সওয়ার পাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি সেখানে যেতে অক্ষম হবে, সে যেন এর জ্বালানির জন্য তেল হাদিয়া হিসেবে পাঠায়। কেননা যে বায়তুল মাকদিসের জন্য হাদিয়া পাঠাবে, সে এতে নামাজ আদায়কারীর মতো সওয়ার লাভ করবে।’ -মুসনাদে আহমদ : ২৬৩৪৩

সুতরাং প্রতিটি মুমিন-মুসলিমের কর্তব্য, ফিলিস্তিন ও এর অধিবাসীদের প্রতি ভালোবাসা রাখা। বায়তুল মাকদিসের পবিত্রতা রক্ষার চেষ্টা করা। সম্ভব না হলে যেকোনো উপায়ে তাদের সাহায্য করা। তাও সম্ভব না হলে অন্তরে ইহুদিদের প্রতি ঘৃণা ও সেখানকার মুসলিমদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করা। এটাই ইমানের দাবি।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION